বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করার পরে যারা সমালোচনা করেছিলেন তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি যেটা পারব সেটাই বলব, যেটা বলব ইনশাল্লাহ আমি সেটা করব এবং সেটা আমি করে দেখাতে পারি। সেজন্য আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ জানাই।বুধবার (২২জুন) ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৫ জুন শনিবার বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। প্রমত্তা পদ্মা নদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। সেটা এখন যুক্ত হচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞ প্যানেল আজকে জামিলুর রেজা সাহেব (গবেষক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ছিলেন) আমাদের মাঝে নেই, আমি তাকে শ্রদ্ধা জানাই যখন বিশ্বব্যাংক সহ বড় বড় মহারথী সরে গেল, কিন্তু তারা কিন্তু সরে যায়নি। তারা কিন্তু সাহস দেখিয়েছেন, এ উপদেষ্টা প্যানেল কিন্তু কাজ করেছেন। তারা যদি আমাদের পাশে না দাঁড়াতেন আমরা পদ্মা সেতু করতে পারতাম কি না সন্দেহ ছিল। তারা কিন্তু পিছু হটেননি। কাজেই আমি তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তারা এই সাহসিক ভূমিকা নিয়েছিলেন। হয়ত আমি খুশি হতাম আজকে যদি জামিলুর রেজা সাহেব বেঁচে থাকতেন আর পদ্মা সেতু দেখে যেতে পারতেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১১ সালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করা হয়। এরপর শুরু হয় ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের পেছনে কে বা কারা ছিল, তা বহুবার বলেছি। ব্যক্তি স্বার্থে বিশেষ এক ব্যক্তির উদ্যোগে ষড়যন্ত্র শুরু হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরে আরও কয়েকজন যুক্ত হয়। দুর্নাম রটানো হয়, দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়।
ব্যাংকের একটি এমডি পদ একজনের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ হয় কী করে! ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থের জন্য দেশের মানুষের কেউ ক্ষতি করতে পারে; এটা সত্যিই কল্পনার বাইরে ছিল, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ষড়যন্ত্রকারীরা ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অভ্যন্তরে একটি গ্রুপ ছিল, যারা অন্যায্যভাবে কিছু কিছু বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল। বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য করার লক্ষ্যে পরোক্ষ চাপ দিতে থাকে। রাজি হইনি। এরপর থেকেই তারা পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে বাধা দিতে থাকে। দুদক তদন্ত করে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পায়নি। পরে কানাডার আদালতেও প্রমাণ হয়, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি।কিন্তু পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে আদালত দুর্নীতির প্রমাণ না পেলেও বিএনপি ও কিছু সুশীল সমালোচনায় মেতে উঠেন। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আজ পদ্মা সেতু বাস্তব, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মা সেতু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি তখন ‘৯৭ সালে আমি জাপান সফরে যাই। সেখানে জাপানের প্রাইম মিনিস্টারের কাছে আমি পদ্মা নদীতে আর খুলনা ভৈরব নদীর উপর রূপসা সেতু করে দেয়ার প্রস্তাব দেই এবং জাপান সরকার তাতে রাজি হয়। যেহেতু পৃথিবীর সব থেকে খরস্রোতা নদীর মধ্যে পদ্মা একটি আমাজনের পরেই পদ্মা। এরপর জাপান পদ্মা সেতু করার জন্য সমীক্ষা শুরু করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ১৯৭৩ সালে জাপান সফরে গিয়েছিলেন, তখন যমুনা নদীর উপর সেতু এবং পদ্মা সেতুর কথাও বলেছিলেন তবে যমুনা সেতুর উপরই তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তখন জাপান সরকার যমুনা নদীর সমীক্ষা করে। জাপানের সহযোগিতায় আমাদের যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণ হয়। যদিও সেতুটা পরবর্তীতে আমার হাতেই নির্মিত হয়েছে। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে আমি সেতু নির্মাণ করি রেল সংযোগসহ। সেটা উল্লেখ করে তাদের যখন প্রস্তাব দেই তখন তারা রাজি হয়।
তিনি বলেন, সমীক্ষা রিপোর্টটাও তারা আমাদের কাছে ২০০১ সালে হস্তান্তর করে। তার ওপর ভিত্তি করেই আমরা ২০০১ এর ৪ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি এবং জাপান সমীক্ষা করে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পয়েন্ট থেকে এই সেতুটা নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের দুর্ভাগ্য ২০০১-এ আমি সরকারে আসতে পারিনি। তখন বিএনপি সরকারে এসে সেটা বন্ধ করে দেয়। বিএনপির নেত্রী বলেছিলেন এখান থেকে হবে না, এটা দৌলতদিয়া থেকে আরিচার ঘাট থেকে এই সেতুটা হবে। জাপানকে পুনরায় সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষায় মাওয়া থেকেই যেন সেতু হয় সেটাই তারা মতামত দেয়। তখন আমরা শুনেছিলাম ২টা পদ্মা সেতু হবে তবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কিছুই করতে পারেনি। বরং পদ্মা সেতুটা বন্ধ করে দিল এটাই হচ্ছে বড় কথা।