গত নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় সরকার। ঠিক এর ৯ মাসের মাথায় শুক্রবার (৫ আগস্ট) আবারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এবার সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে অকটেন এবং পেট্রোলের দামও। অযুহাত আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি।
তবে সাধারণ মানুষের চরম এক দুঃসময়ে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। শনিবার (৬ আগস্ট) সকালে এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালেও বর্তমানে তেলের বাজার নিম্নমুখী। এই সময়ে বাজার পর্যবেক্ষণ না করে কেবল আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। অনতিবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে, পূর্বের মূল্য বহাল রাখার দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষের চরম এক দুঃসময়ে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছির বাড়ানো ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে। পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থের বাইরে চলে যাবে। পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দেবে। শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে, ফলে আমদানির উপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক ছোট ছোট শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে জাতীয় অর্থনীতির উপর চাপ আরও বাড়বে। অন্যদিকে বেকারত্ব সমস্যা আরও প্রকট হবে। আমাদের দেশে সাধারণত তেলের দাম যে পরিমাণ বাড়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি বাড়ে বাস ও অন্যান্য গণপরিবহন ভাড়া। পণ্য পরিবহন ভাড়াও ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেয় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিকেরা। বাসের ক্ষেত্রে সরকার, বাসের মালিক-শ্রমিক নেতারা মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে বাসের ভাড়া যে পরিমাণ বাড়ায়, বাসে তার কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করে। সরকার বাসের ভাড়া বাড়িয়ে দিলেও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী বাসে আদায় হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা বা বর্ধিত ভাড়া আদায় বন্ধে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে না।
এদিকে রাজধানীতে রয়েছে পরিবহন সংকট। যাতে সকালে বিপাকে পড়েন অফিস ও স্কুলগামী যাত্রীরা। অভিযোগ রয়েছে, এই সুযোগে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ও সিএনজি অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী লিটারে ডিজেল ৩৪ টাকা, পেট্রোল ৪৪ এবং অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৬ টাকা। নতুন এ দাম কার্যকর হয়েছে গত রাত ১২টা থেকে। সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেশি। তাই সমন্বয় জরুরি ছিল দেশেও। আর সে বিষয়টি সামনে রেখেই ভোক্তা পর্যায় পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও কমলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। যাতে গেল ৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন দরে বিক্রি হচ্ছে টেক্সাস ক্রুড অয়েল।