১২:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অক্সিজেন আনার পথে ছেলেকে আটকালো পুলিশ; বাড়িতে বাবার মৃত্যু।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৩৫:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১
  • 32

সাতক্ষীরায় অসুস্থ বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে ছেলেকে পুলিশ দু’ঘণ্টা আটকে রাখায় অক্সিজেনের অভাবে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই বৃদ্ধের নাম মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।

বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ। জরুরি অক্সিজেন প্রয়োজন হওয়ায় শহরের পলাশপোলে জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদৌস আলফার বাড়ি থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। বেলা ১০টার দিকে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র। লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছে বলে তার কাছে এক হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষ তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখেন বাবা অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচাতে পারতাম।’ তিনি এই অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘লকডাউনে আমরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছি। এই সুভাষের কারণে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র বলেন, ‘একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুতগতিতে ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। কাগজ দেখাতে না পারায় তার গাড়িটি আটক করে রেখে তাকে অন্য একটি ইজিবাইকে সিলিন্ডার নিয়ে চলে যেতে বলেছিলাম কিন্তু সে মোটরসাইকেল না নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। বিষয়টি ট্রাফিক পরিদর্শককে জানালে তিনি মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দিতে বলেন। এর মধ্যে সামান্য সময় দেরি হয়েছে। পরে শুনলাম তার বাবা মারা গেছেন। এটি দুর্ঘটনাবশত হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। অভিযুক্ত এএসআই সুভাষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

অক্সিজেন আনার পথে ছেলেকে আটকালো পুলিশ; বাড়িতে বাবার মৃত্যু।

Update Time : ০৫:৩৫:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

সাতক্ষীরায় অসুস্থ বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে ছেলেকে পুলিশ দু’ঘণ্টা আটকে রাখায় অক্সিজেনের অভাবে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই বৃদ্ধের নাম মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।

বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ। জরুরি অক্সিজেন প্রয়োজন হওয়ায় শহরের পলাশপোলে জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদৌস আলফার বাড়ি থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। বেলা ১০টার দিকে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র। লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছে বলে তার কাছে এক হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষ তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখেন বাবা অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচাতে পারতাম।’ তিনি এই অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘লকডাউনে আমরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছি। এই সুভাষের কারণে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র বলেন, ‘একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুতগতিতে ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। কাগজ দেখাতে না পারায় তার গাড়িটি আটক করে রেখে তাকে অন্য একটি ইজিবাইকে সিলিন্ডার নিয়ে চলে যেতে বলেছিলাম কিন্তু সে মোটরসাইকেল না নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। বিষয়টি ট্রাফিক পরিদর্শককে জানালে তিনি মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দিতে বলেন। এর মধ্যে সামান্য সময় দেরি হয়েছে। পরে শুনলাম তার বাবা মারা গেছেন। এটি দুর্ঘটনাবশত হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। অভিযুক্ত এএসআই সুভাষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।